top of page

অবাস্তব শহরের ঘ্রাণ - ব্লগ ১

কি বিমর্ষ একটা আলো,

তোমার ঐ চোখের কোনে জল জল করে নিভে গেল।।

(বিকাল আর সন্ধ্যার মধ্যে এক অদ্ভুত সময় আছে

সে সময় সব ভীড় করা মানুষেরা দিকভ্রান্ত হয়

মানুষ অসহিস্নু হয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়

অদ্ভুত আলো এসে চোখে লাগে

চোখের কোনে পানি মিলিয়ে যায়)

- ঢাকার রাস্তা (১২ জুলাই)

শীতের ভোরে ঢাকা

ছবিঃ লেখক

ঠিক কি নিয়ে লিখব সেটা বলা কঠিন, কিন্তু লেখার নেশাটা ছাড়ছেনা। উপরন্তু সময়মত লেখার অভাবে সেগুলো মস্তিষ্কের সেলে জমা হতে হতে একসময় ঢাকার রাস্তার জ্যামের মত একটি অপ্রাসঙ্গিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। আমিও ঢাকাবাসীর মত নির্লিপ্তভাবে ব্যাপারটাকে এড়িয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টাটা চালিয়েও শেষ রক্ষা হলনা। নেমে পড়লাম অনেকটা না ভেবেই।

আমি ভেবেচিন্তে লেখার লোকনা। বহুবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু লেখার থেকে ভাবার কাজে যেহেতু পরিশ্রম কম। মোটামুটি ৯৮% ভাগেই দেখা গেছে ভাবনার জগতের সিড়ি দিয়ে ঠিকই ঘুমঘরে পৌঁছে গেছি। ফলাফল শূন্য। কি যে এত ভাবলাম তাও কোথায় মিলিয়ে গেল, লেখার খাতাটাও ফাকা পড়ে থাকল। এমনটা অনেকবার হয়েছে। তাই ও পথেও এবার আর হাটবনা।

লেখার বিষয়ের প্রশ্নে হাজার মতবাদের খোঁজ পাওয়া যাবে বলাই বাহুল্য। ঢাকা এবং তার সমস্যা, শুধু এই বিষয়ের বিবরণ মালা দিয়েই একটা গোটা গোষ্ঠি তাদের ছেলেমেয়ে সহ তিন পুরুষ খেয়েপরে বেঁচে থাকতে পারবে। আর যদি আরেকটু বড় মন করে পৃথিবীর সাথে বাংলাদেশের স্থায়ী সম্পর্কের ব্যাপারটা আনেন তাহলে আপনি নির্ঘাত বুদ্ধিজীবী।

তবে যদি আমার ভাবনাটা জানতে চান তবে বলি, আমার কিন্তু বেশ অদ্ভুত লাগে। ২ কোটি মানুষের এই ছোট্ট একটা শহরে আমরা দিনের পর দিন কাটিয়ে দিচ্ছি, কোন বিরক্তি নেই, ছেড়ে চলে যাবার কোন চিন্তা বা আন্দোলন নেই, সব কিছু বিনাবাক্যে মেনে নিয়ে মোটামুটি surreal একটা জীবন কাটানো, এ এক বিরল অভিজ্ঞতা। পৃথিবীর এই সময়ে এমন একটা শহরে না থাকলে এর অভিজ্ঞতা থেকেই বরং আপনি বঞ্চিত। সে দিক দিয়ে দেখলে নিজেকে ভাগ্যবানের দলেই রখি মনে মনে। এবং আমার মনে হয়,Capitalism এর এই সর্ণযুগে বোধহয় সব থেকে হাস্যকর সামাজিক সাম্যাবস্থা হবে বাংলাদেশে।

এখানে গরীব বলে যে শ্রেনীটাতে আমরা থাকতাম বা জানতাম, ঢাকার মত unstable শহরে সেটা আর থাকবেনা। মানে ধনী-মধবিত্য-গরীব না হয়ে নিম্ন এবং মধবিত্য আর লাগামহীন ধনী এমন কিছু একটা শ্রেনীবিভাগের সৃষ্টি হবে। কিছু উদাহরন দেই, এখানে একজন সদ্য পাশ করা স্থ্যাপতি বা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার আর একজন রিকশা্চালক বা চায়ের দোকানদারের আয় একই বা কোন কোন ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দলের আয় বেশি। সুতরাং অর্থনৈতিকভাবে তাদের কোন পার্থ্যক্য নেই। তেমনি ভাবে, একজন সরকারী কর্মকর্তা আর ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীর আয়ও এক। এখানেও ক্ষেত্রভেদে দ্বিতীয় দলেরই জয় হবার কথা। কারণ উপরতলার লোক রয়ে সয়ে খেলেও সিন্ডিকেটের খেলাটা থাকে কর্মচারী শ্রেনীর লোকদের কাছেই। এর বাইরে দলবলের FoodChain তো আছেই। পাশাপাশি যেহেতু সাইনবোর্ড বানানো ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে সফলতার সাথে আমরা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনতে পেরেছি সেহেতু একটা বিশাল গোষ্ঠী মোটামুটী একই আয় এবং কাছাকাছি পরিমান বাস্তব জ্ঞান নিয়ে জীবন যাপন করছে। যাদেরকে আমরা নিম্ন এবং সাধারণ মধ্যবিত্ত্যের কাতারে ফেলে রাখব। এবং এর ফলে অদ্ভুত অদ্ভুত দৃশ্য আমরা দেখতে শুরু করব। যেমন ধরেন, রিকশাওয়ালার কাছে দরখাস্ত করছেন যে তিনি আপনাকে এতটা দূরত্ব পোউছে দেয়ার ব্যাপারে সম্মত হবেন কিনা কিংবা বাসার ইলেক্ট্রিশিয়ানের চেম্বারে একমাস আগে সিরিয়াল না নিলে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন না।

আহ! বাংলাদেশে না থাকলে কি আর এসব অভিজ্ঞতা পাওয়ার সুযোগ হত?

Featured Posts
Recent Posts
bottom of page